হাওজা নিউজ এজেন্সি: নাজাফে আশরাফের হোসাইনিয়া আযমে ফাতিমিয়া মসজিদে জুমার খুতবায় সাইয়্যেদ সদরুদ্দিন কুবাঞ্চি বলেন, “আজ ইরাকের অন্যতম আলোচিত বিষয় হলো আসন্ন নির্বাচন। আমাদের বিশ্বাস, আল্লাহর ইচ্ছা ও তত্ত্বাবধানে নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা আমাদের ভয় দেখায় না; বরং এটি শক্তি ও গণতান্ত্রিক পরিপক্বতার প্রতীক। তাই আমরা সবাইকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার আহ্বান জানাই এবং নির্বাচন সংক্রান্ত যেকোনো অনিয়ম তদন্তে নিরাপত্তা বাহিনীকে সমর্থন করি।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানাই— যেন ভোটার তালিকা হালনাগাদ প্রক্রিয়া পুনরায় চালু করা হয়, যাতে নাগরিকদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত না হতে হয়।”
গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রসঙ্গে ইমাম জুমা কুবাঞ্চি বলেন,
“আমরা এখন গাজার জনগণের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধের তৃতীয় বছরে প্রবেশ করেছি— এক ভয়াবহ যুদ্ধ, যেখানে ৬০ হাজারেরও বেশি মানুষ শহিদ হয়েছেন; যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। অনেকের মরদেহ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে।”
তিনি বলেন, “ইসরায়েল আন্তর্জাতিক মদদ ও সর্বাধুনিক অস্ত্রের উপর নির্ভর করে যুদ্ধ করেছে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত পরাজিত হয়ে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে বাধ্য হয়েছে।”
হুজ্জাতুল ইসলাম কুবাঞ্চি আরও জানান, “এই যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে এমন ধারা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে— ইসরায়েল প্রায় ২০ হাজার ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে, আর হামাস ২৭ জন ইসরায়েলি বন্দিকে ছেড়ে দেবে। পাশাপাশি গাজা পুনর্গঠনের কাজও শুরু হবে।”
তিনি বলেন, “আমরা আশা করি এই চুক্তির ধারাগুলো কার্যকর হবে। ইতোমধ্যে ইসরায়েল তার সেনাদের গাজা থেকে প্রত্যাহার শুরু করেছে, যা প্রমাণ করে— ‘প্রতিরোধের তত্ত্ব’ আত্মসমর্পণের তত্ত্বের উপর বিজয় অর্জন করেছে। এর চূড়ান্ত ফলাফল হলো— শত্রুর পরাজয় এবং মজলুম জনগণের জয়। এখন আমাদের পরবর্তী দাবি হলো— ইসরায়েলকে যুদ্ধাপরাধী রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করা এবং নেতানিয়াহুকে আন্তর্জাতিক আদালতে অভিযুক্ত করা।”
ইরাকের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, “হালাবচে প্রদেশে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে নাজাফ আশরাফকে ইরাকে চরমপন্থা মোকাবিলার শীর্ষ প্রদেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। আমরা এ সাফল্যের জন্য জনগণ, স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।”
তিনি আরও বলেন, “যেসব ব্যক্তি অতীতে ইরাক ত্যাগ করে বিদেশে পালিয়েছে, তাদের দেশে ফেরার পর আইনি তদন্তের আওতায় আনতে হবে— বিশেষত যারা সন্ত্রাসবাদ বা সাম্প্রদায়িক উসকানির অভিযোগে অভিযুক্ত।”
তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন, “আমরা স্পষ্টভাবে জানাতে চাই— সাম্প্রদায়িক উসকানিদাতা বা সাবেক বাথপন্থীদের জন্য ইরাকে আর কোনো স্থান নেই।”
খুতবার ধর্মীয় অংশে ইমাম কুবাঞ্চি মানবিক ও নৈতিক বিকাশের ধারাবাহিক আলোচনার নতুন অধ্যায়ে “শিশুদের লালন— সহমর্মিতা না কঠোরতা” শীর্ষক বিষয় নিয়ে বক্তব্য রাখেন।
তিনি বলেন, “আমরা এই বিষয়টি বেছে নিয়েছি কারণ ইরাকের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে— ২০২৫ সালে, যা প্রায় শেষ হতে চলেছে, দেশে ২৬ হাজারেরও বেশি পারিবারিক সহিংসতার মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। আরও বহু ঘটনা আদালতে পৌঁছায়নি, যা নির্দেশ করে— ইরাকি পরিবারে সহিংসতা এখনো উদ্বেগজনক মাত্রায় বিদ্যমান।”
তিনি নবী করিম (সা.)-এর হাদীস উদ্ধৃত করে বলেন— “তোমরা তোমাদের সন্তানদের তিন বিষয়ে শিক্ষিত করো: তোমাদের নবীর (সা.) ভালোবাসা, তাঁর আহলে বাইতকে (আ.) ভালোবাসা এবং কুরআন তেলাওয়াত।”
তিনি বলেন, “শিক্ষা একটি দায়িত্ব, কিন্তু প্রশ্ন হলো— কীভাবে সন্তানদের সঠিকভাবে গড়ে তোলা যায়? ইসলামি শিক্ষায় বারবার জোর দেওয়া হয়েছে দয়া, মমতা ও কোমলতার মাধ্যমে সন্তানদের লালনপালনের ওপর— কঠোরতার নয়। তাঁদের সঙ্গে খেলাধুলা করো, তাঁদের মানসিক জগতে প্রবেশ করো, ভালোবাসা প্রকাশ করো, প্রতিশ্রুতি রক্ষা করো— এভাবেই প্রকৃত শিশুশিক্ষা সম্পন্ন হয়।”
শেষে তিনি বলেন, “সন্তান প্রতিপালনের মূল ভিত্তি হওয়া উচিত দয়া ও সহমর্মিতা; কঠোরতা নয়।”
ইমাম কুবাঞ্চি খুতবার সমাপ্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পরিবার ও শিশু সুরক্ষা বিভাগকে এই গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ইস্যুতে সচেতন ভূমিকা রাখার জন্য ধন্যবাদ জানান।
আপনার কমেন্ট